মালদা

গঙ্গা ভাঙনে সর্বস্বান্ত সাধারণ মানুষ, উচ্চ মাত্রায় রাজনীতি

 

দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গা ভাঙনের শিকার হয়ে সর্ব শান্ত হয়েছে প্রচুর মানুষ। ঘরবাড়ি, জমি জায়গা সমস্ত কিছু গঙ্গায় তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে তলিয়ে গেছে ওই সমস্ত মানুষের জীবন ও জীবিকা। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই দুঃখের দিনেও ঘৃণ্য রাজনীতি থেমে থাকেনি। রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার একে অপরের দোষারোপ করতেই ব্যস্ত। তাদের টানাপোড়নের জন্য স্থায়ী ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই গঙ্গা ভাঙনের কাজ এখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

    মালদা জেলার পাঁচটি ব্লক গঙ্গা ভাঙন কবলিত এলাকা। বর্ষার মরশুম কেবলমাত্র অস্থায়ীভাবে কিছু বালির বস্তা ফেলে গঙ্গার ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেটাও বিফলে যায়l গঙ্গা ভাঙনের জন্য কোন সরকারই এখনো স্থায়ীভাবে পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে এবার গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন নাগরিক কমিটি তরফে খোলা চিঠি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের দিতে চলেছেl সংগঠন চাইছে নির্বাচনের যেই দলের প্রার্থী জিতুক না কেন সেই প্রার্থী যাতে সংসদে গঙ্গা ভাঙনের বিষয়টি তুলে ধরে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেl

    গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন নাগরিক কমিটির সদস্য মুসারেফুল আনোয়ার জানান, ১৯৭১ সালের পর থেকে মালদা জেলায় গঙ্গা ভাঙন হয়েই চলেছে। মালদা জেলায় ইতিমধ্যে ৭৬ খানা মৌজা গঙ্গা নদীতে বিলীন হয়েছে। এই ৭৬ খানা মৌজা বসবাস করতেন প্রায় সাত লাখ মানুষ আজকে তাদের বাড়িঘর জমি জায়গা সমস্ত কিছু হারিয়ে তারা আজ নিঃস্ব। ভাঙন কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার ভাঙ্গন নতুন করে শুরু হয়। আমরা চাই  কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার তারা যৌথ উদ্যোগে এই গঙ্গা ভাঙন সমস্যাকে সমাধান করুক। সামনে যে লোকসভা নির্বাচন এই নির্বাচনের দুই লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে সেখানে রাজনৈতিক দলের যারা প্রতিনিধি হিসাবে দাঁড়িয়েছেন তাদেরকে আমরা আমাদের দাবি নিয়ে খোলা চিঠি দিব।

 

    এ বিষয়ে দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শিরূপা মিত্র চৌধুরী জানান, গঙ্গা ভাঙন অ্যাকশন কমিটি যেটা করছেন সেটা সঠিক করছেন। আমি তাদের সাথে আছি। আমি তাদের সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করব। আমার লোকসভা কেন্দ্রে মানিকচক, শামসেরগঞ্জ, সমস্ত এলাকায় গঙ্গা ভাঙন হচ্ছে। রাজ্য সরকার বা এখানকার জেলা প্রশাসন তাদের কিছু সহযোগিতা করে কিন্তু তাদেরকে এখনো পর্যন্ত কোনরকম ভাবে স্থায়ী পুনর্বাসন বা সহযোগিতা করেনি। আমার এই গঙ্গা ভাঙন এলাকার মানুষদের যাতে স্থায়ী সমাধান হয় সেটাই আমার মূল লক্ষ্য।

 

    এদিকে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন জলপথ ও সেচ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, গঙ্গা ভাঙন এলাকায় এখনো পর্যন্ত যা কাজ করেছে সেটি আমাদের সরকারই করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার কোন রকম ভাবে সহযোগিতা করেনি একটা টাকাও দেয়নি। সেখানে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পূর্ণ সহযোগিতা দরকার না হলে এই গঙ্গা ভাঙন স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব নয়।

 

    গঙ্গা ভাঙ্গন বিষয় নিয়ে রীতিমত সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ঈসা খান চৌধুরীও।

 

    নির্বাচন আছে তাই ভোট পেতে সকলেই স্বীকার করে নিচ্ছেন ভাঙনের কথা। একে অপরকে এগিয়ে এসে এই সমস্যার সমাধান করার কথাও বলছেন। কিন্তু নির্বাচন পেরতেই সকলেই হাওয়া। দেখা মেলেনা কারও। আর ভাঙনের কবলে একটু একটু করে ডুবতে থাকেন সাধারণ মানুষজন, কিন্তু পুরো দমে চলতে থাকবে রাজনীতি। হ্যাঁ এটাই আমাদের ভারতবর্ষ। স্বাধীন ভারতবর্ষ।